26 এপ্রিল 2025

আরাভিন্দ চিতম্বারাম খেলবেন ৫৮তম বিয়েল দাবা উৎসবের মাস্টার্স বিভাগে

এই গ্রীষ্মে মাত্র পাঁচ দিন বা এক সপ্তাহ সময় থাকলেও দাবার প্রতি ভালোবাসা থাকলে এখনই নাম লেখানোর সময়। বিখ্যাত বিয়েল দাবা উৎসবে “ফ্রিস্টাইল চেস” এবং “উইকের টুর্নামেন্ট” (WT1 ও WT2)–এর জন্য নিবন্ধন চলছে, যেখানে অংশ নিতে যাচ্ছেন বিশ্বের নামকরা দাবাড়ুরা। ২০২৫ সালের মাস্টার্স ও চ্যালেঞ্জার্স বিভাগের খেলোয়াড়দের তালিকা ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে এবং দাবার জগতে এটি আলোড়ন তুলেছে।

মাস্টার্স বিভাগের অংশগ্রহণকারীরা

আরাভিন্দ চিতম্বারাম (২৫ বছর, ২৭৪৯ এলো, ভারত)
ভারতের উদীয়মান দাবা প্রজন্মের অন্যতম উজ্জ্বল প্রতিনিধি হিসেবে চিতম্বারাম এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। প্রাগ ও চেন্নাইয়ে সাম্প্রতিক জয়ের মাধ্যমে তিনি বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে ১১তম স্থানে উঠে এসেছেন। তার এই উত্থান কিছুটা ধীরগতির হলেও তার কোচ রমেশের কথাই সত্যি হয়েছে—“বিশ্বনাথন আনন্দের পর ভারতের সবচেয়ে বড় প্রতিভা।”

লিয়েম কোয়াং লে (৩৪ বছর, ২৭২৯ এলো, ভিয়েতনাম)
তীব্র কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি ও সময় নিয়ন্ত্রণে অসাধারণ দক্ষতা নিয়ে লিয়েম দাবার সব ধরণের ফরম্যাটেই নিজের আধিপত্য দেখিয়েছেন। কার্লসেন ও ডিং লিরেনের বিরুদ্ধে জয় এবং ২০২২ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত বিয়েলে টানা তিনবার শিরোপা জয়ের মাধ্যমে তিনি নিজেকে দাবার ইতিহাসে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এবার তার লক্ষ্য চতুর্থবারের মতো ট্রফি জয়।

ফ্রেডেরিক স্ভানে (২১ বছর, ২৬৬৮ এলো, জার্মানি)
তার খেলায় থাকে আক্রমণাত্মক রণকৌশল এবং তীক্ষ্ণ চূড়ান্ত পর্বের লড়াই। ২০২১ সালের কাডার চ্যালেঞ্জে মাতিয়াস ব্লুবাউমকে হারিয়ে তিনি নিজের প্রতিভার পূর্ণ পরিচয় দেন। এখনও ২৭০০ এলো ছাড়িয়ে যেতে পারেননি, তবে তার অগ্রগতি দেখে বোঝা যায়, তিনি খুব শিগগিরই বিশ্বসেরাদের কাতারে পৌঁছে যাবেন।

ভোলোদার মুরজিন (১৮ বছর, ২৬৫৮ এলো)
অত্যন্ত কৌশলী ও আপসহীন দাবার ধরণ তৈরি করেছেন এই তরুণ। পারিবারিক নির্যাতন এবং রাশিয়ান ফেডারেশনের সমর্থনের অভাব—সব বাধা পেরিয়ে বর্তমানে তিনি বিশ্ব র‍্যাপিড চ্যাম্পিয়ন। মাত্র ১৮ বছরেই তিনি নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন, কিন্তু বিয়েল উৎসবে এবার বড় সাফল্যের প্রত্যাশায় মাঠে নামছেন।

রাদোশ্লাভ ভোজতাশেক (৩৮ বছর, ২৬৫৫ এলো, পোল্যান্ড)
দাবার তাত্ত্বিক দিক এবং অভিযোজনযোগ্যতায় তার জুড়ি মেলা ভার। একসময় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আনন্দের সহকারী হিসেবে কাজ করা ভোজতাশেক কার্লসেন, কারুয়ানা ও নাকামুরার মতো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে জয় পেয়েছেন। ২০২০ সালে বিয়েলে চ্যাম্পিয়ন হলেও তিনি এখনো সেই শিরোপা ধরে রাখার সুযোগ পাননি। তবে গুকেশের সঙ্গে কাজ করে তিনি আবার নিজেকে নতুনভাবে প্রমাণ করছেন।

সালেহ সালেম (৩২ বছর, ২৬৩১ এলো, সংযুক্ত আরব আমিরাত)
দাবার দ্রুত ও ব্লিটজ সংস্করণে তার আগ্রাসী এবং তীক্ষ্ণ খেলার ধরণ তাকে বিশেষভাবে পরিচিত করেছে। ২০২৩ সালের চ্যালেঞ্জার্স বিভাগে দুর্দান্ত জয় তাকে মাস্টার্সে পৌঁছে দিয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে ইভান সোকোলভের শিষ্য সালেম এবার তার তৃতীয় বিয়েল অংশগ্রহণে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে উচ্চাশা নিয়ে আসছেন।

এই বছরের বিয়েল দাবা উৎসব শুধু প্রতিযোগিতা নয়, এটি প্রতিভা, সংকল্প ও সাহসিকতার মিলনস্থল। নতুন প্রজন্মের তারকা ও অভিজ্ঞ গ্র্যান্ডমাস্টাররা একত্রিত হয়ে তৈরি করছেন এমন এক পরিবেশ, যেখানে দাবার প্রতিটি চালেই গল্প লুকানো। এই ট্রায়াথলন ফরম্যাট দাবার সৌন্দর্য ও জটিলতাকে নতুন রূপে তুলে ধরবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।