বিশ্বের বৃহত্তম জগদ্ধাত্রী প্রতিমা: কৃষ্ণনগরের পুজোর প্রধান আকর্ষণ

কৃষ্ণনগরে এবার জগদ্ধাত্রী পুজোয় দর্শনার্থীদের জন্য অন্যতম বিস্ময় হতে চলেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জগদ্ধাত্রী প্রতিমা। এই বিশাল প্রতিমার উচ্চতা ৫২ ফুট, আর মুকুট ও আনুষঙ্গিক সাজ মিলিয়ে এটি ৬৪ ফুট পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। স্থানীয় খ্যাতনামা মৃৎশিল্পী রমেশ পাল ও তাঁর ১৮ জন সহকারী মিলে দেড় মাস ধরে দিনরাত পরিশ্রম করে এই অনন্য সৃষ্টি তৈরি করছেন।
কৃষ্ণনগরের প্রতিভা ক্লাবের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ
কৃষ্ণনগরের প্রতিভা ক্লাব প্রতি বছর ধুমধাম করে জগদ্ধাত্রী পুজোর আয়োজন করে থাকে। এবছর তারা ৪৩তম বর্ষে পদার্পণ করছে এবং পুজোর বাজেট ধরা হয়েছে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা। রাধানগর টিভি টাওয়ারের বিপরীতে, কৃষ্ণনগর-মাজদিয়া রাস্তার ধারে প্রতিমাটি তৈরি হচ্ছে, যা ইতিমধ্যেই দর্শকদের নজর কেড়েছে।
ক্লাবের এক সদস্য জানান, ‘‘আমাদের লক্ষ্য ছিল এমন কিছু তৈরি করা যা আগে কেউ দেখেনি। তাই আমরা বিশ্বের সবচেয়ে বড় জগদ্ধাত্রী প্রতিমা গড়ার পরিকল্পনা করি।’’
প্রতিমা তৈরির পেছনের কৌশল ও উপকরণ
এত বড় একটি প্রতিমা নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে শক্তিশালী কাঠামো এবং নানান উপাদান। প্রতিমার প্রধান কাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে একটি ৫০ ফুট উচ্চতার বিশাল কদম গাছের ওপর ভিত্তি করে। এছাড়া ৭০০-এর বেশি বাঁশ, ২৮ কাহন খড়, ১৫ ট্রাক্টর মাটি এবং কয়েক কুইন্টাল দড়ি ব্যবহার করা হয়েছে প্রতিমার স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে। সম্পূর্ণ প্রতিমাটিকে সাজানো হচ্ছে শোলার কারুকার্যে, যা কৃষ্ণনগরের শিল্পীদের দক্ষতার পরিচয় বহন করে। মুকুটটি তৈরি হচ্ছে কৃষ্ণনগরের ঐতিহ্যবাহী ডাকের সাজের মাধ্যমে, যা প্রতিমার সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তুলবে।
প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা ও নির্মাণের চ্যালেঞ্জ
নির্মাণকাজ শুরুর পর, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে কয়েকদিন কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছিল। তবে উদ্যোক্তাদের মতে, এই সাময়িক বিলম্ব বড় কোনো সমস্যার সৃষ্টি করেনি। এখন প্রতিমার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে, এবং পূজার আগেই এটি সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দর্শনার্থীদের জন্য বিশাল আকর্ষণ
প্রতিমাটি এতটাই বিশাল ও শিল্পসমৃদ্ধ যে এটি দেখতে কৃষ্ণনগরের বাইরের বহু মানুষও আসবেন বলে অনুমান করা হচ্ছে। পুজোর সময় শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্ত ও পর্যটকের ঢল নামবে। উদ্যোক্তারা প্রতিমার নিরাপত্তা ও পুজোর সার্বিক ব্যবস্থাপনার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।
এবারের কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজো যে এক নতুন মাত্রায় পৌঁছাচ্ছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশ্বের সবচেয়ে বড় জগদ্ধাত্রী প্রতিমা দেখতে সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।