26 এপ্রিল 2025

ক্লাসমেট অলরাউন্ডার ২০২৪—বাংলাদেশের শিক্ষানীতির মতো সামগ্রিক শিক্ষার রূপান্তর ঘটাচ্ছে ভারতের উদ্যোগ

আইটিসির জনপ্রিয় নোটবুক ও স্টেশনারি ব্র্যান্ড ক্লাসমেট সম্প্রতি নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত একটি চমকপ্রদ জাতীয় ফাইনাল ইভেন্টের মাধ্যমে তাদের তৃতীয় ‘ক্লাসমেট অলরাউন্ডার (CAR)’ প্রোগ্রামের পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছে। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে ভারতের ১৪টি শহরের ৭০০টি স্কুল থেকে বাছাই করা ২.১ লক্ষ শিক্ষার্থীর মধ্যে শীর্ষ ৬০ জন প্রতিযোগী জাতীয় স্তরের ফাইনালে অংশ নেন। প্রতিযোগিতার শেষ ধাপে জুনিয়র (ষষ্ঠ-অষ্টম শ্রেণি) ও সিনিয়র (নবম-দ্বাদশ শ্রেণি) বিভাগে চারজন করে দুটি বিজয়ী দল নির্বাচিত হয়। প্রত্যেক বিজয়ী শিক্ষার্থীকে দেওয়া হয় ১ লক্ষ রুপি এবং ক্লাসমেট অলরাউন্ডার ২০২৪ ট্রফি।

প্রতিযোগিতার মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রতিটি শিক্ষার্থীর ভেতরের প্রতিভাকে আবিষ্কার করা এবং তাদের বহুমাত্রিক দক্ষতাকে বিকাশের সুযোগ দেওয়া। এই প্রোগ্রামে শিক্ষার্থীরা অংশ নেয় বিভিন্ন বিষয়ে যেমন যৌক্তিক বিশ্লেষণ ও সমালোচনামূলক চিন্তা, সাংস্কৃতিক সচেতনতা, পরিবেশ ও টেকসইতা, খেলাধুলা ও স্বাস্থ্য, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ। এছাড়াও, সৃজনশীলতা, বক্তৃতা, অভিনয়শিল্পসহ নানা প্রতিভা প্রকাশের ক্ষেত্রও এখানে রাখা হয়, যাতে শিক্ষার্থীরা বাস্তব জীবনের চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত হতে পারে।

২০২৪ সালের এই আসরটি মাসব্যাপী চলেছে, যেখানে সারাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। অনুষ্ঠানের বিচারকদের মধ্যে ছিলেন বিভিন্ন খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব, যার মধ্যে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জোসেফ ইম্যানুয়েল, যিনি ভারতের স্কুল সার্টিফিকেট বোর্ড (CISCE)-এর চেয়ারপারসন। বিচারক হিসেবে আরও ছিলেন আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ ও লেখক অপূর্বা চামারিয়া এবং DAV ইউনাইটেডের প্রতিষ্ঠাতা মনোজ মিত্তল।

আইটিসি লিমিটেডের এডুকেশন ও স্টেশনারি বিভাগের প্রধান নির্বাহী বিকাশ গুপ্তা জানান, “২০২৪ সালের ক্লাসমেট অলরাউন্ডার বিজয়ীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কেবল প্রতিযোগিতাই করে না, বরং নিজের ভেতরের দক্ষতা ও সম্ভাবনাকে অন্বেষণ করার সুযোগ পায়। আমরা চাই শিক্ষার্থীরা সমন্বিত বিকাশের সুযোগ পেয়ে দেশের প্রতিটি কোণায় শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি পাক।”

তিনি আরও বলেন, “ক্লাসমেটের মূলমন্ত্র ‘শেখা হোক আনন্দের’, এবং আমরা শিক্ষার্থীদের শেখার পথে সর্বদা সঙ্গী হতে চাই। প্রতিটি শিশুর মধ্যে থাকা বিশেষ প্রতিভা উদযাপন করা ও স্বীকৃতি দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য।”

প্রধান অতিথি জোসেফ ইম্যানুয়েল বলেন, “এই প্রোগ্রামটি জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ অনুযায়ী সমন্বিত শিক্ষার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে ভারসাম্যপূর্ণ বিকাশ আমরা কল্পনা করি, এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীরা তার বাস্তব রূপ।”

প্রতিযোগিতাটি তিনটি ধাপে অনুষ্ঠিত হয়—স্কুল, শহর ও জাতীয় পর্যায়। দুটি বিভাগে বিভক্ত করে (জুনিয়র ও সিনিয়র) শিক্ষার্থীদের মধ্যে বয়স অনুযায়ী সমান সুযোগ নিশ্চিত করা হয়। জাতীয় ফাইনালে তিনটি ধাপে মূল্যায়ন করা হয়: দলগত উপস্থাপনা, যুক্তিভিত্তিক কুইজ এবং পরিস্থিতিভিত্তিক প্রশ্নোত্তর পর্ব। বিচারকরা শিক্ষার্থীদের বাস্তব পরিস্থিতিতে দ্রুত চিন্তা করার ও শেখা প্রয়োগের ক্ষমতা যাচাই করেন।

প্রতিটি রাউন্ডের মূল্যায়ন জাতীয় শিক্ষানীতির মানদণ্ড অনুযায়ী NCERT, SCERT ও NCF-এর বিশেষজ্ঞদের দ্বারা প্রস্তুত করা হয়। এই মূল্যায়নে গুরুত্ব পায় পাঁচটি মূল স্তম্ভ—সমালোচনামূলক চিন্তা, ভারতীয় সাংস্কৃতিক সচেতনতা, পরিবেশ ও টেকসইতা, খেলাধুলা ও ফিটনেস এবং সহানুভূতি ও নৈতিকতা।

CAR-এর বাইরে ক্লাসমেট আরও বিভিন্ন শিক্ষামূলক প্রকল্প পরিচালনা করছে, যার মধ্যে রয়েছে অগমেন্টেড রিয়েলিটি ভিত্তিক স্টেম বিষয়ক নোটবুক, ‘এডু গেমস’ নামক সংক্ষিপ্ত যুক্তিভিত্তিক খেলা এবং ‘মাই ক্লাসমেট’ অ্যাপ, যা শিক্ষার্থীদের দক্ষতা গঠনে সহায়তা করে। ক্লাসমেট শিক্ষা বোর্ডগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে যাতে শেখার অভিজ্ঞতা আরও প্রাণবন্ত ও আনন্দময় হয়ে ওঠে।