22 জানুয়ারি 2025

বিশেষ শিক্ষায় অন্তর্ভুক্তি: প্রখ্যাত বিশেষজ্ঞের মতামত নিয়ে বিতর্ক

বিশ্বজুড়ে শিক্ষার বিভিন্ন দিক নিয়ে কাজ করা একটি অলাভজনক সাংবাদিক সংস্থা, দ্য হেচিঞ্জার রিপোর্ট, সম্প্রতি বিশেষ শিক্ষার অন্তর্ভুক্তি নীতিকে কেন্দ্র করে একটি গঠনমূলক বিতর্কের সম্ভাবনা উন্মোচন করেছে। ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডগলাস ফুচস এবং তার সহযোগীদের একটি গবেষণাপত্র বিশেষ শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রচলিত একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

অন্তর্ভুক্তি এবং এর চ্যালেঞ্জ

ডগলাস ফুচস এবং তার সহলেখকদের মতে, গত ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশেষ শিক্ষার্থীদের সাধারণ শ্রেণীকক্ষে অন্তর্ভুক্তির উপকারিতা নিয়ে গবেষণা হয়েছে। তবে, এসব গবেষণার ভিত্তিতে এমন কোনও শক্তিশালী প্রমাণ পাওয়া যায়নি যা বলে যে সাধারণ শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্তি তাদের জন্য সর্বদা উপকারী। গবেষণাটি এই বসন্তে জার্নাল অব লার্নিং ডিজঅ্যাবিলিটিস-এ প্রকাশিত হওয়ার কথা এবং অনলাইনে তার আগেই এটি প্রকাশিত হতে পারে।

ফুচস বলেছেন, “আমরা বলছি না যে সম্পূর্ণ অন্তর্ভুক্তি কাজ করতে পারে না। তবে গবেষণার ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো কঠিন যে শিক্ষার্থীদের কোথায় রাখা উচিত। গবেষণার প্রমাণ অত্যন্ত দুর্বল এবং ত্রুটিপূর্ণ।”

বিশেষ শিক্ষার জন্য আলাদা পরিবেশের গুরুত্ব

ফুচস আরও বলেন, প্রতিবন্ধী বা ঝুঁকিপূর্ণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানে উচ্চ মানের গবেষণা বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে। এই গবেষণাগুলোতে এমন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে যেখানে বিশেষায়িত শিক্ষাদানের জন্য নিবিড় নির্দেশনার প্রয়োজন হয়। তিনি মনে করেন, অনেক ক্ষেত্রে, শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা শ্রেণীকক্ষ বা আলাদা স্কুলই সঠিক হতে পারে।

তিনি বলেন, “কিছু শিক্ষার্থী সাধারণ শ্রেণীকক্ষে ভাল করে। তারা সেখানে থাকাই উচিত। কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষার্থীর জন্য নিবিড় নির্দেশনার প্রয়োজন, এবং আমাদের কাছে এটি প্রদান করার দক্ষতা আছে। এর পক্ষে প্রমাণও প্রচুর।”

অন্তর্ভুক্তির সমর্থনে আগের গবেষণা

তবে ফুচসের এই মতামত আগের শত শত গবেষণার বিপরীতে যায়। এই গবেষণাগুলো দেখিয়েছে যে অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ শিক্ষার্থীদের বুদ্ধিবৃত্তিক এবং সামাজিক বিকাশে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। এই গবেষণাগুলো নীতিনির্ধারকদের বিশেষ শিক্ষার জন্য অতিরিক্ত তহবিল বরাদ্দে সাহায্য করেছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১৫ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রতিবন্ধী হিসেবে চিহ্নিত এবং বিশেষ শিক্ষা সেবার আওতায় রয়েছে। তাই এই বিতর্ক শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নয়, বরং পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার খরচ এবং কাঠামোকে প্রভাবিত করতে পারে।

গবেষণার কাঠামো এবং সীমাবদ্ধতা

ফুচস এবং তার সহলেখকরা তাদের গবেষণাপত্রে আগের গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ ত্রুটি নির্দেশ করেছেন। তাদের মতে, আগের গবেষণাগুলোতে আলাদা শ্রেণীকক্ষে থাকা শিক্ষার্থীদের এবং সাধারণ শ্রেণীকক্ষে থাকা শিক্ষার্থীদের মধ্যে পার্থক্য সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা হয়নি। আলাদা শ্রেণীকক্ষে থাকা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাধারণত গুরুতর প্রতিবন্ধকতা বা শিক্ষাগত সমস্যা থাকে। সেক্ষেত্রে তাদের ফলাফল সাধারণ শ্রেণীকক্ষে থাকা শিক্ষার্থীদের তুলনায় নিম্নমানের হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু এটি প্রমাণ করে না যে সাধারণ শ্রেণীকক্ষই সর্বোত্তম বিকল্প।

গবেষণা অনুযায়ী, এই দুই ধরনের শ্রেণীকক্ষের শিক্ষার্থীদের এলোমেলোভাবে ভাগ করে পরীক্ষা করা গেলে আরও সঠিক ফল পাওয়া যেত। তবে এটি নৈতিক এবং ব্যবহারিক উভয় দিক থেকেই সম্ভব নয়।

ফুচসের এই নতুন বিশ্লেষণ বিশেষ শিক্ষার পদ্ধতি এবং পরিবেশ নিয়ে ভবিষ্যতে আরও গভীর গবেষণার পথ খুলে দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি কেবল একটি শিক্ষাগত বিতর্ক নয়, বরং নীতিনির্ধারকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা।